Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পুষ্টি চাহিদা পূরণে দেশি ফলের গুরুত্ব (ভাদ্র ১৪২৫)

ফলদবৃক্ষ রোপণ পক্ষ ২০১৮ উপলক্ষ্যে কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্তৃক আয়োজিত
রচনা প্রতিযোতগিতায় ‘ক’ গ্রুপের প্রথমস্থান অধিকারী

অবন্তী নাথ তিথী
ভূমিকা : ‘আমাদের দেশ
একটি সোনার ছবি
যে দেশের কথা
কবিতা ও গানে
লিখেছেন অনেক কবি ॥’
প্রকৃতির রূপসী কন্যা আমাদের এই বাংলাদেশ। বিচিত্র রূপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। পাহাড়, নদী, ফুল, ফল, সমতলভূমি, সবুজ অরণ্য সবকিছু মিলিয়ে সত্যিই আশ্চর্য সুন্দর আমাদের এ বাংলার প্রকৃতি। ঋতুবৈচিত্র্যে বাংলার প্রকৃতি সাজে নানা সাজে। এদেশে বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন ফলের সমাবেশ ঘটে, যেগুলো দেশীয় ফল নামে পরিচিত। এগুলো কোনোটি মিষ্টি, কোনোটি টক আবার কোনোটি অপূর্ব স্বাদযুক্ত। চির সবুজ দেশ হিসেবে সারাবিশে^ পরিচিত আমাদের বাংলাদেশ। যেসব প্রাকৃতিক উপাদান এ দেশকে সৌন্দর্যম-িত করেছে তার মধ্যে দেশীয় ফল অন্যতম। প্রকৃতির অকৃত্রিম সবুজের সমারোহে অন্যরকম এক সৌন্দর্য যোগ করেছে বাংলাদেশের বিচিত্র সব ফল। ফল সবারই প্রিয় খাদ্য। ফল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমাদের দেশে বিভিন্ন মৌসুমে নানা রকমের ফল পাওয়া যায়। কখনো কম আর কখনো বেশি। যেমন- গ্রীষ্মকালে সব থেকে বেশি ফল পাওয়া যায়। এজন্যই গ্রীষ্মকে মধুমাস বলে। এই মধুমাস ছাড়াও অন্যান্য সময়ে যে ফল পাওয়া যায় তাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমাদের দেশে পুষ্টির চাহিদা জোগানে দেশি ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমরা বলতে পারি যে,
    ‘অর্থ পুষ্টি স্বাস্থ্য চান
    দেশি ফলের গাছ লাগান।’
পুষ্টি কি? : জীব মাত্রই খাদ্য গ্রহণ করে, কারণ জীবের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। জীবের পুষ্টির জন্য বিভিন্ন উপাদানের প্রয়োজন হয়। জীব তার বৃদ্ধি ও পরিপুষ্টির জন্য কতগুলো উপাদান যেমন- ভাত, মাছ, ডাল, শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ইত্যাদি গ্রহণ করে। এ উপাদানগুলোর অভাবে জীব সুষ্ঠুভাবে বাঁচতে পারেনা। এ উপাদান গুলোকে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান বলে। জীবের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিগুণে ভরপুর খাদ্যের একান্ত প্রয়োজন।
পুষ্টি উপাদানের উৎস : জীবনধারণের জন্য খাদ্য যেমন অপরিহার্য, তেমনি সুস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য প্রয়োজন। এই খাদ্যই জীবকোষে জারিত হয়ে দেহে তাপ এবং শক্তি তৈরি করে। জীব এর পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে দেশীয় ফল বিরাট ভূমিকা পালন করে। নানা ধরনের ফলগুলো পুষ্টি উপাদানের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা যায়। অধিকাংশ ফল একাধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হয়ে থাকে।
    ‘রোপণ করলে ফলের চারা
    আসবে সুখের জীবন ধারা’।
দেশি ফলের প্রকারভেদ : বাংলাদেশে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের ফল দেখা যায়। ফল দুই রকম। যেমন- সরস ফল ও নীরস ফল।
সরস ফল : আম, জাম, কমলালেবু, লিচু, ডালিম ইত্যাদি। নীরস ফল : বাদাম, সুপারি, নারিকেল ইত্যাদি।
দেশি ফলের নাম : আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, শরিফা, চালতা, সাতকরা, ডুমুর, করমচা, লটকন, বেল, কদবেল, গাব, তেঁতুল, তাল, ডালিম, অড়বরই, আঁশফল, জলপাই, খেঁজুর, জামরুল, কাউফল, আমলকী, তৈকর, পানিফল, ফলসা, বাঙ্গি, তরমুজ, বিলিম্বি, কমলা, শানতোল, জাবটিকাবা, স্ট্রবেরি, প্যাসন ফল, অ্যাভোকেডো, ড্রাগন ফল, রুটিফল, তেঁতুল, নাশপাতি, মাল্টা, বেতফল, তুঁতফল, লুকলুকি ইত্যাদি।
দেশি ফলের পুষ্টিগুণসহ বিবরণ : প্রত্যেকটি জীবের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন। পুষ্টির চাহিদা জোগানে দেশি ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ দেশিফল গুলো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। যা জীব দেহের পুষ্টিসাধন, দেহের ক্ষয়পূরণ, দেহের রোগ প্রতিরোধক শক্তি উৎপাদন এবং কর্মশক্তি ও তাপ উৎপাদনে বিরাট ভূমিকা রাখে। নিচে বিভিন্ন ধরনের দেশি ফলের পুষ্টিগুণসহ বিবরণ দেয়া হলো :
কাঁঠাল : আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল। কাঁঠাল একটি জনপ্রিয় ফল। আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্র এটি পাওয়া যায়। এটি স্বাদে গন্ধে অনন্য। পুষ্টির দিক থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি কাঁঠালের এমন কোনো অংশ নেই যা অপ্রয়োজনীয়। কাঁঠালে প্রচুর এনার্জি। কাঁঠালে শর্করার পরিমাণ বেশি। কাঁঠাল গ্রীষ্মকালের ফল। পাকা কাঁঠালের ক্যালরি প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ কিলোক্যালরি এবং খনিজ লবণের পরিমাণ প্রায় ০.৯ গ্রাম। কাঁচা কাঁঠালের ফাইবারের পরিমাণ পাকা কাঁঠালের বেশ কয়েক গুণ বেশি। তাই ডায়বেটিক মানুষের জন্য কাঁচা কাঁঠাল উপকারী। রক্তের চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য কাঁচা কাঁঠালের জুড়ি নেই। কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে মাছ অথবা মাংসের মজাদার রেসিপি তৈরি করা হয় যা একদিকে যেমন মুখরোচক তেমনি অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর। কাঁঠাল পুষ্টি সমৃদ্ধ। এতে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁঠালের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া উচ্চরক্তচাপের উপশম হয়। কাঁঠাল সর্বত্র পাওয়া যায় তবে আশুলিয়ায় বেশি উৎপন্ন হয়।
আম : ‘রাজা নাই, শাহ নাই, রাজশাহী নাম।
    হাতি- ঘোড়া কিছু নাই, আছে শুধু আম।’
সর্বত্র আম উৎপন্ন হয় তবে রাজশাহীতে বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয়। আমের নানা ধরনের জাত আছে। যেমন- গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাতি, মিয়ার চারা, লখনা, ফজলি, আশি^না, দুধসর, ফনিয়ার চারা, কাঁচামিঠা, জালিবান্ধা, কুয়া পাহাড়ি, কুমড়া জালি, মোহনভোগ, পাটনায় গোপালভোগ, রাণী প্রসাদী, ভাদ্রি, রাজভোগ, ল্যাংড়া। আয়রন ও সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণে বেশ কার্যকরী আম। আম রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ডায়বেটিসের সঙ্গে লড়াই করে। ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। আমে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ প্রোটিন যা জীবাণু থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়। আমে রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। চোখের চারপাশের শুষ্কভাবও দূর করে। পাকা আমে কাঁচা আমের তুলনায় শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। কাঁচা আম দেহের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। লিভারের সমস্যায় কাঁচা আম খাওয়া উপকারী। এটি বাইল এসিড নিঃসরণ বাড়ায়। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে পরিষ্কার করে। দেহে নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। খনিজ পদার্থ আয়রনের ভালো উৎস আম। প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও সোডিয়াম বিদ্যমান। এছাড়া খনিজ লবণ, ভিটামিন বি, ই, সেলেনিয়াম, এনজাইম, ম্যালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, টারটারিক অ্যাসিড বিদ্যমান। এজন্যই আমকে বলা হয় ফলের রাজা। অর্থাৎ ঞযব শরহম ড়ভ গধহমড়বং. কেবল স্বাদে মিষ্টি বা ত্বককে ভালো রাখাই নয়। এর মধ্যে রয়েছে এমন অনেক পুষ্টিগুণ যা শরীরকে ভালো রাখে।
পেঁপে : পেঁপের অনেক পুষ্টিগুণ। কাঁচা ও পাকা দুই ধরনের পেঁপেই শরীরের জন্য উপকারী। কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে প্যাপেইন ও কাইমোপ্যাপেইন নামের প্রচুর প্রোটিওলাইটিক এনজাইম। এ উপাদান আমিষ ভাঙতে সাহায্য করে। প্রায়ই সর্বত্রই পেঁপে পাওয়া যায়।
আঙ্গুর : আঙ্গুরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে। এছাড়া ফাইটো কেমিক্যাল ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা আমাদের ত্বকের সুরক্ষায় বিশেষ কাজ করে। এছাড়া ভিটামিন সি, টরোস্টেলবেন, তামা, লোহা, ম্যাংগানিজ ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান।
কলা : কলা একটি অতি পরিচিত দেশি ফল। এ ফলটি কম বেশি সারা বছরই পাওয়া যায়। এটা সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। কলার বেশ কয়েকটি জাত আছে। কলাতে আমাদের শরীরের শক্তি বর্ধনকারী সুকরোজ, ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ এবং ফাইবার রয়েছে। গবেষণায় জানা যায়, মাত্র দুইটি কলা প্রায় ৯০ মিনিট পূর্ণোদ্যমে কাজ করার মতো শক্তি জোগায়। কলাতে ট্রিপ্টোফ্যান নামক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন বি-৬, আয়রন, পটাসিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন-বি-১২, ম্যাগনেসিয়াম বিদ্যমান। কলা প্রাকৃতিক এন্টাসিড হিসেবে কাজ করে।
    ‘আম জাম তাল বেল কাঁঠাল কলা লিচু
    পুষ্টি গুণে স্বাদে ভরা আরো কত কিছু।’
ছফেদা : গ্রীষ্মকালীয় দেশগুলোতে এ ফলটি ভীষণ জনপ্রিয়। শুধু স্বাদে নয়, গুণেও অনন্য এ ফলটি। নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ছফেদা। শক্তির উৎস এ ফলটি শরীরে  নবশক্তি সঞ্চারের মাধ্যমে শরীর মনকে চাঙ্গা ও পুনরুজ্জীবিত করে। বিভিন্ন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, ভিটামিন এ, সি ও ই এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, কপার ও আয়রনসহ অপরিহার্য বহু পুষ্টি উপাদান রয়েছে ফলটিতে।
শরিফা : ক্যারোটিন, ভিটামিন ‘সি’ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল।
চালতা : চালতায় ক্যালসিয়াম ও শর্করা বিদ্যমান।
সাতকরা : ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ।
ডুমুর : ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম ও ক্যালরি রয়েছে প্রচুর।
করমচা : প্রচুর পরিমাণে পটাশ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও ভিটামিন ‘সি’ বিদ্যমান।
লটকন : লটকন একটি ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ ফল।
বেল : বেল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে শে^তসার, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছে।
কদবেল : প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং স্বল্প পরিমাণে লৌহ বিদ্যমান।
গাব : প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে।
তেঁতুল : শর্করা, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।
তাল : ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার।
ডালিম : ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার।
অড়বরই : ভিটামিন ‘সি’ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল।
আঁশফল : এটি একটি আমিষ ও চিনি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল।
জলপাই : ভিটামিন ‘সি’, ক্যালসিয়াম, লৌহ বিদ্যমান।
খেঁজুর : ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল।
জামরুল : ক্যারোটিন ও ভিটামিন বি-২ সমৃদ্ধ ফল।
আমলকী : প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল।
পানিফল : পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল।
বাঙ্গি : শর্করা, ক্যারোটিন ও ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
তরমুজ : ক্যালসিয়াম ও লৌহ বিদ্যমান।
কমলা : আমিষ ও ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
তেঁতুল : প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, টারটারিক এসিড, অক্সালিক এসিড, ইনর্ভাট সুগার, পেকটিন পলি স্যাকারাইড বিদ্যমান।
তুঁতফল : এ ফলে সব ধরনের পুষ্টিগুণ বিদ্যমান, তবে সবচেয়ে বেশি আছে ক্যালসিয়াম ও ক্যারোটিন।
    ‘হরেক রকম দেশি ফল পুষ্টি গুণে ভরা
    প্রতিদিন খেলে পরে শেষ হবে সব রোগ।’
দেশিয় ফলের ঔষধিগুণ : পুষ্টির চাহিদা জোগানে দেশি ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য আমাদের উচিত বেশি বেশি করে ফলের চারা রোপণ করা। দেশীয় ফল শুধুমাত্র পুষ্টিগুণ দিক থেকে নয় গুরুত্বপূর্ণ তাছাড়াও দেশি ফলের গাছের ঔষুধিগুণ আমাদের দেশের মানুষের জীবনযাত্রায় বিরাট ভূমিকা রাখে। নিচে কয়েকটি দেশীয় ফলের ঔষুধিগুণ সম্পর্কে বিবরণ দেয়া হলো :
কাঁঠাল : এটি ডায়েবেটিক মানুষের জন্য কাঁচা কাঁঠাল উপকারী। এছাড়া রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে এবং উচ্চরক্তচাপ এর উপশম ঘটায়।
আম : ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। রক্ত তৈরিতে বিরাট ভূমিকা রাখে। এছাড়া দেহের শক্তি বৃদ্ধিতে ও কাঁচা আম লিভারের সমস্যার উপশম ঘটায়।
শরিফা : পাকা ফল বলকারক, বাত ও পিত্তনাশক, তৃষ্ণা, শান্তিকারক, বমননাশক, রক্তবৃদ্ধিকারক ও মাংস বৃদ্ধিকারক। আতার শিকড় রক্ত আমাশয় রোগে হিতকর।
চালতা : কচি ফল গ্যাস, কফ, বাত ও পিত্তনাশক। পাকা ফলের রস চিনিসহ পান করলে সর্দিজ¦র উপশম হয়।
ডুমুর : ডুমুর ফল টিউমার ও অন্যান্য অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি নিবারণে ব্যবহৃত হয়। পাতা চূর্ণ, বহুমূত্র, বৃক্ক ও যকৃতের পাথর নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। ডুমুর সবজি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
লটকন : লটকন অম্ল মধুর ফল। ফল খেলে বমিভাব দূর হয় ও তৃষ্ণা নিবারণ হয়। শুকনো গুঁড়া পাতা খেলে ডায়রিয়া ও মানসিক চাপ কমায়।
বেল : বেল কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয়, জন্ডিস দূর করে। এছাড়া হজম শক্তি বাড়ায়, বলবর্ধক বৃদ্ধি করে এবং চোখের ছানি ও জ্বালা উপশম করে।
করমচা : কাঁচা করমচা গায়ের ত্বক ও রক্তনালী শক্ত ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। পালাজ¦র নিরাময় করে। শিকরের রস গায়ের চুলকানি ও কৃমি দমনে সাহায্য করে।
তাল : তালের রস শ্লেষ্মানাশক, মূত্র বৃদ্ধি করে, প্রদাহ ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিবারণ করে। রস থেকে তৈরি তালমিছরি সর্দি কাশির মহৌষধ। যকৃতের দোষ নিবারক ও পিত্তনাশক।
জামরুল : এটি বহুমূত্র রোগীর তৃষ্ণা নিবারণে উপকারি।
পানিফল : অ্যালার্জি ও হাত ফোলা, পা ফোলা উপশম হয়। পিত্তপ্রদাহ, উদরাময় ও তলপেটের ব্যাথা উপশম হয়।
তরমুজ : পাকা ফল মূত্র নিবারক; দেহকে শীতল রাখে, অর্শ লাঘব করে। আমাশয়, বীর্জহীনতা ও প্রসাবের জ¦ালা পোড়া বন্ধ করে। আমাদের সবারই উচিত বেশি বেশি বেশি করে দেশীয় ফলের চারা রোপণ করা। তাহলে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা মেটবে তেমনি অন্যদিকে বিভিন্ন রোগের উপশম ঘটবে। যদি আমরা রোগমুক্ত জীবন চাই তাহলে অবশ্যই বেশি করে দেশীয় ফলের চারা রোপণ করতে হবে।
    রোগমুক্ত জীবন চান
    ফল ঔষধির চাষ বাড়ান।
দেশিয় ফলের পুষ্টিমান : আমে জলীয় অংশ ৭৮.৬ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৯০ কিলোক্যালরি, আমিষ ১ গ্রাম, চর্বি ০.৭ গ্রাম, শর্করা ২০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৬ গ্রাম, লৌহ ১.৩ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৮৩০০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ‘সি’ ৪১ মিলিগ্রাম বিদ্যমান প্রতি ১০০ গ্রামে।
কাঁঠালে খাদ্যশক্তি ৪৮ কিলোক্যালরি, আমিষ ১.৮ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৯.৯ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৫ মিলিগ্রাম। ক্যারোটিন ৪৭০০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন ‘সি’ ২১ মিলিগ্রাম বিদ্যমান প্রতি ১০০ গ্রামে।
পেঁপে তে খাদ্যশক্তি ৪২ কিলোক্যালরি, আমিষ ১.৯ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, শর্করা ৮.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩১ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৮১০০ মাইক্রোগ্রাম এবং ভিটামিন সি ৫৭ মিলিগ্রাম বিদ্যমান প্রতি ১০০ গ্রামে।
লিচুতে শর্করা ১৩.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ‘সি’ বিদ্যমান প্রতি ১০০ গ্রামে।
আনারস এ খাদ্যশক্তি ৩০ কিলোক্যালরি, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, শর্করা ৬.২ গ্রাম, ক্যারোটিন ১৮৩০, ভিটামিন ‘সি’ ২১ মিলিগ্রাম প্রতি ১০০ গ্রামে বিদ্যমান।
সুতরাং, আমাদের পুষ্টিমান যুক্ত খাদ্য গ্রহণে দেশীয় ফল বিরাট ভূমিকা পালন করে।
    ‘ফল বৃক্ষের অশেষ দান
    অর্থ বিত্তে বাড়ায় মান।’
দেশি ফলের গাছ লাগানোর কারণ : ফল সবাই পছন্দ করে খেতে। ফলের যেমন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন তেমনি আরও অনেক গুণ রয়েছে। নিচে দেশি ফল গাছ লাগানোর কয়েকটি কারণ দেয়া হলো :
১. দেশি ফল গাছ মানুষের খাদ্য জোগান দেয়।
২. পুষ্টির অভাব মেটায়।
৩. পশুপাখির খাবারেরও উৎস।
৪. উৎকৃষ্ট কাঠ ও জ¦ালানি পাওয়া যায়।
৫. আসবাবপত্র, যানবাহন, কুটির শিল্পের উপকরণ পাওয়া যায়।
    ‘রোপণ করে ফলের চারা যে জন পায় সুখ
    জানিও সে আদর্শ মানুষ থাকে না তার দুখ।’
৬. বিভিন্ন রোগের ওষুধ এবং পথ্য হিসেবে ফলের অবদান যথেষ্ট।
৭. ফল রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়।
৮. বিদেশি ফলের আমদানি কমিয়ে অর্থের সাশ্রয় করা যায়।
৯. ফল থেকে উন্নতমানের জুস, জ্যাম, জেলি, আচার, মোরব্বা তৈরি করা যায় ও এসব প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ হতে পারে।
১০. নিবিড় ফল চাষের মাধ্যমে পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করে বেকারত্ব দূর করা যায়।
    ‘পাকা ফলে তুষ্ট মন
     যোগায় পুষ্টি বাড়ায় ধন’
১১. ফলের চারা/কলমের নার্সারি করে কৃষি শিল্প গড়ে তোলা যায়।
১২. মাটির ক্ষয়রোধ ও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
১৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা করে।
১৪. জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন সরবরাহ করে।
১৫. খাদ্য নিরাপত্তা।
    ‘ফল খান দেশি
    বল পাবেন বেশি।’
১৬. উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে চাষ করে সামাজিক ও জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখা।
১৭. গাছ ছায়া দেয়।
সুতরাং, দেশি ফল গাছ রোপণের গুরুত্ব অপরিসীম।
পুষ্টির অভাবজনিত রোগ : পুষ্টির অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগের আবির্ভাব ঘটে। যেমন- আয়োডিনের অভাবে গলগ- রোগ হয়। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে রিকেটস রোগ হয়। লৌহ, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি-১২ ইত্যাদির অভাবে রক্তশূন্যতা ঘটে।
তাই এসব পুষ্টির অভাবজনিত রোগ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে আমাদের দেশীয় ফলের চাষ বৃদ্ধি করতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে দেশীয় ফল খেতে হবে। কারণ দেশীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, শর্করা, ভিটামিন ডি, লৌহ, ফলিক অ্যাসিড ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান থাকে।
দেশীয় ফল বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন : আমাদের দেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। যদি দেশিয় ফল বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হলে, দেশে দেশিয় ফলের অভাব মিটবে, মানুষ আর পুষ্টিহীনতায় ভুগবে না। কারণ পুষ্টির চাহিদা জোগানে দেশি ফল অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ফরমালিন মুক্ত দেশি ফলের গুরুত্ব : আমাদের দেশে বিজ্ঞানের আবির্ভাবে অনেক কিছুই নতুন করে সৃষ্টি হচ্ছে। তার কিছু ভালো ও খারাপ দিক রয়েছে। যেমন- বর্তমানে নির্দিষ্ট আম সময়ের আগে বাজারে মিলছে মানেই তাতে কার্বাইড ও ফরমালিনসহ ক্ষতিকর সব রাসায়নিক মিশানো আছে।
    ‘বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ
    কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ।’
কিন্তু এদেশের মানুষরা ভেবে দেখে না যে সময়ের আগে মৌসুমি ফল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। তাই আমাদের উচিত দেশিয় ফলে এই বিষ প্রয়োগ বন্ধ করা।
    ‘বিশ^ পরিবেশ দিবস সফল হোক
    দেশের গাছ আর দেশের ফল রক্ষা করুন
    বিশ প্রয়োগ বন্ধ করুন।’
পুষ্টির চাহিদা জোগানে দেশি ফলের গুরুত্ব : সব জীবকে সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করতে হলে অবশ্যই সুস্থ দেহের অধিকারী হতে হবে। দেহে রোগবালাই যদি লেগেই থাকে, তাহলে কোনো প্রাণী সুস্থ থাকে না। এসব রোগ সাধারণত পুষ্টির অভাবে হয়ে থাকে। তাই আমাদের পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। আমরা খুব সহজেই এসব পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারি দেশি ফলের চাষের মাধ্যমে। দেশি ফল যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিমান।
    ‘দেশি ফলের রস গুণ নেই তুলনা তার
    স্বাদ, গন্ধ, পুষ্টিমান কত রঙের বাহার।’
পুষ্টির চাহিদা জোগানে দেশি ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি করে দেশি ফলের চারা রোপণ করা। আমরা চাইলে আমাদের বাড়ির ছাদে ফলের চারা রোপণ করে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারি।
    ‘বাড়ির ছাদে ফলের চাষ
    পাবেন ফল মিটবে আশ।’
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পুষ্টির চাহিদা জোগানে দেশি ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমাদেরকে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় উদ্দীপনায় দেশি ফল চাষের প্রতি আরো যতœশীল হওয়া একান্ত প্রয়োজন। দেশি ফলে যেসব উপাদান বিদ্যমান থাকে, একমাত্র সেসব উপাদানই পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে এবং পুষ্টিজনিত রোগ থেকে মুক্ত রাখতে পারে।
    ‘দেশি ফলের চারা রোপণ করুন
    পুষ্টির অভাব দূর করুন।’

 

বি আর আর আই উচ্চ বিদ্যালয়, শ্রেণি : নবম, মোবাইল : ০১৭৪৮৫৭৩৭০০


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon